সাবেক ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ-যুবলীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার॥ নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ, যুবলীগকে পুনর্বাসন চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বিতর্কিত সাবেক ছাত্রদল নেতা আরিফুল ইসলাম মুন্নার বিরুদ্ধে। যুবদলের ছত্র ছায়ায় কয়েক ছাত্রলীগ এবং যুবলীগকে পুনর্বাসন করতে গত ১৫ মার্চ নগরীর হট প্লেটে এই ইফতার পার্টির আয়োজন করেন তিনি। এর আগে গত বছর বরিশাল প্ল্যানেট ওয়ার্ল্ড শিশু পার্কে অনুষ্ঠান করে সেখানে প্রধান অতিথি করেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসিম দেওয়ানকে।
ইফতার পার্টির ভিডিও থেকে দেখা যায়, সাবেক মেয়র খোকন আব্দুল্লাহর অস্থায়ী নির্বাচনি কার্যালয়ের সমন্বয়ক যুবলীগ নেতা মঞ্জুরুল আলম শাওন, আওয়ামী পন্থী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি, পটুয়াখালী (সংরক্ষিত) আসনের সাবেক মহিলা এমপি লুৎফুন্নেসার ছেলে আতিক মাসুম, মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সৈয়দ রুবেল, ২৩ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, বর্তমান যুবলীগ নেতা খান জুবলি, ঝালকাঠির সাবেক এমপি আমির হোসেন আমুর আশীর্বাদ পুস্ট যুবলীগের পরাজিত চেয়ারম্যান মামুনের ভাই যুবলীগের জিয়া উল হক সুমন সহ কয়েক যুবলীগ নেতা একই মঞ্চে বসে ইফতার করেন। যা লাইভ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। বিষয়টি নিয়ে তারপর থেকেই স্থানীয় ছাত্র দল এবং যুবদলের নেতা কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। নেতাকর্মীরা বলছে, পুলিশ যখন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন তখন বিতর্কিত সাবেক এই ছাত্রদল নেতার শেল্টারে প্রকাশ্যে এভাবে ইফতার করাটা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ সহ শহীদ জিয়া তথা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র আদর্শের বিরোধিতা করার শামিল।ঘরোয়া পরিবেশ এমন ইফতার করা ভিন্ন কথা কিন্তু প্রকাশ্যে ছাত্রলীগ, যুবলীগ নিয়ে সাবেক ছাত্রদল নেতার এই ইফতার করা মানে তাদেরকে ওপেন করতে সহায়তা করা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বর্তমানে ছাত্রদলের এক নেতা জানিয়েছেন, মুন্না বিগত সময় আওয়ামী লীগের সাথে ব্যালেন্স করে রাজনীতি করেছেন। নাজির পুলের আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক কাউন্সিলর সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী রফিকুল ইসলাম খোকন ওরফে মামা খোকনের ও মামা টুটুলের ছত্র ছায়ায় চলতেন। ব্যালেন্স রাজনীতি করার কারনে গত ১৬ বছরে বিএনপির কেন্দ্রী ঘোষিত হরতাল, অবরোধ কর্মসূচিতে তার কোন উপস্থিতি ছিল না। ফলে কখনো কারা বরণ করে নাই এই বির্তকিত নেতা।
পরবর্তীতে খোকন আব্দুল্লাহ মেয়র হলে তার প্রধান হাতিয়ার মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য অসিম দেওয়ানের সাথে আতাত করে চলেছেন। সে সময় বরিশাল প্লানেট ওয়ার্ল্ড শিশু পার্কে একটি অনুসঠান করে সেখানে প্রধান অতিথি করেন সাবেক মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অসিম দেওয়ান কে। এক সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এডভোকেট মজিবুর রহমান সরোয়ারের রাজনীতি করে পরে আবার খোলস বদলে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া সিকদারের পিছু নিয়েছে। সাবেক মহানগর ছাত্রদল এবং যুবদলের একাধিক নেতা জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এর সময় সব নেতারা যখন পালিয়ে বেড়িয়েছে মুন্না তখন বরিশাল শহরে বীরদর্পে ঘুরে বেড়িয়েছেন।
জমি কেনা বেচা, বিচার শাল্লিস করে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে আতাত করে টাকা কামিয়েছেন। দলের কোন কর্মসূচিতে উপস্থিত না থেকে সোহাগ নামের এক সমিতি ব্যাবসায়ীর সাথে প্রাইভেটকারে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এমনকি ইন্ডিয়াতেও ট্যুরে গিয়েছেন তার সাথে। তাছাড়া থাইল্যান্ড সহ কয়েকটি দেশেও গিয়ে সময় কাটিয়েছেন আন্দোলন চলাকালীন সময়ে। ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় ৫ ই আগস্ট এর আগের দিন পর্যন্ত কোন কর্মসূচিতেও তার সরব উপস্থিতি ছিল না। অথচ ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শোনা যাচ্ছে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পথ বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় নতুন করে আট গাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন তিনি। যদিও তার সুযোগ সন্ধানী রাজনীতির আমলনামা কেন্দ্র অবহিত আছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে সাবেক ছাত্রদল নেতা আরিফুর রহমান মুন্না বলেন, ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় সবচেয়ে বড় সাফারার আমি। সুতরাং তাদের সাথে কম্প্রোমাইজ প্রশ্নই আসে না। আমার পেছনে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ৯৯ ব্যাচের ইফতার পার্টি ছিলো। এখানে কে কোন দল করে সেটা বিষয় না। আর জিতু হত্যা মামলা থেকে আমাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মাজহারুল ইসলাম জাহান বলেন, যারা গত ১৬ বছর আমাদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা দিয়ে ঘরছাড়া করেছে। তাদের সাথে আতাত বা পুনবার্সন করার চেস্টা করা হলে তা দলের সাথে চরম বেঈমানী করা হবে। এটা জিয়ার সৈনিকরা করতে পারে না।
এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক বলেন, দল থেকে সু-স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগ তথা আওয়ামী ঘারনার কাউকে পুনবার্সন কিংবা কোন প্রোগ্রামে এক সাথে থাকতে পারবে না। যদি এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে প্রমাণসহ কেন্দ্রে চিঠি দেওয়া হবে।
গত ১৫ মার্চ এক সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্না জানান, যুবলীগের কেউকে কোন যুবদল নেতা আশ্রয় দিলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার করা হবে। বিতর্কিত এই নেতার বিষয়ে এখন কি ব্যবস্থা নেয়া হয় তা দেখার বিষয়।
আরিফুর রহমান মুন্না সাবেক ছাত্রদল নেতা জিতু হত্যা মামলার এজাহার নামীয় অন্যতম আসামি। এছাড়া ১/১১ এর সময় নাইন এমএম পিস্তল সহ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন তিনি।
এ বিষয়ে সাবেক ছাত্রদল নেতা জিতুর ভাই রফিকুল ইসলাম টিপু বলেন, আরিফুর রহমান মুন্না জিতু হত্যার এজাহারভুক্ত আসামী। সর্বশেষ ডিবির এসি ভাস্কর সাহার সহযোগীতায় আরিফুর রহমান মুন্নাকে বাদ দিয়ে চার্জশীট দাখিল করে। এরআগে ৩ বার চার্জশীটে নারাজি দেন তিনি।