ভোলায় ২২ দিন পর নদীতে নেমে হতাশ জেলেরা

ভোলা প্রতিনিধিঃ ২২ দিন বন্ধ থাকার পর নদীতে ইলিশ শিকার করতে গিয়ে হতাশ হয়ে ঘরে ফিরছে ভোলার জেলেরা। বরিশাল,চাঁদপুর,লক্ষীপুর ও শরীয়তপুরসহ উজান অঞ্চলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবাধে মাছ শিকার করায় ভোলার নদ-নদীতে ইলিশ নেই বলে দাবি করছেন তারা। এছাড়া গত বছরের চেয়ে ১০ দিন আগে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় মা-ইলিশ সময়মতো ডিম ছাড়তে পারেননি বলেও দাবি জেলেদের । ইলিশের পরিমাণ কম হওয়ায় দামও বেড়ে গেছে।
জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের ভরা মৌসুম থাকে। এবছর ভরা মৌসুমেও কাঙ্খিত ইলিশের দেখা পায়নি জেলেরা। যখন দু-একটি ইলিশ ধরা পড়া শুরু হয়েছিলো ঠিক তখনই সরকার, মা ইলিশ যাতে অবাধে ডিম ছাড়তে পারে সেজন্য ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে। গতবছর যেখানে ১৪ অক্টোবর থেকে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিলো, এ বছর তা জারি হয় ৪ অক্টোবর থেকে। তারপরও নিষেধাজ্ঞা মেনে ভোলার জেলেরা ইলিশ শিকার থেকে বিরত ছিলো। জেলেরা ভেবেছিল ২২ দিনের বিরতির পর তাদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে কিন্তু আশানুরূপ ইলিশ পায়নি তারা।
ক্রেতাদের আশা ছিলো, নিষেধাজ্ঞার পর প্রচুর পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়বে, দাম কমবে। বরং ইলিশের পরিমাণ কম হওয়ায় এখন ইলিশের দাম আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সময় মতো নিষেধাজ্ঞা জারি না করা এবং উজানের দিকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবাধে ইলিশ শিকারের কারণে এখনও ডিমওয়ালা মাছ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। জেলেরা দাবি করছে তাদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলাপ আলোচনা না করে নিষেধাজ্ঞার সময় নির্ধারণ করায় এমন পরিস্থিতি হয়েছে।
ভোলার ইলিশা ঘাটের জেলে মোঃ ইব্রাহিম বলেন, সরকার ২২ দিনের আমাদের যে অভিযান দিছে সেটা আমরা পালন করেছি। ২২ দিন পর নদীতে গিয়ে আমরা যে মাছ পাইছি, অন্যান্য বছরের অভিযানের পরে নদীতে গেলে আমরা যে মাছ পাইতাম তার চেয়ে অনেক কম।
নাছির মাঝি ঘাটের জেলে মোঃ নকিব বলেন, গত বছরের চেয়ে বছর অভিযান ১০ দিন আগে দেয়ায় মাছের ডিম ছাড়া সাথে অভিযানের সাথে কোন মিল নাই। এখনো আমরা ডিমওয়ালা মাছ পাইতেছি। অভিযানটা আরো কিছুদিন পর হইলে মাছের ডিমও ছাড়তে পারতো, আমাদের জেলেদের জন্যও ভালো হইতো। এজন্য আমাদের জেলেদের সাথে আলাপ করে অভিযানটা দিলে ভালো হইতো।
মাছ ব্যবসায়ী মনজুর আলম বলেন, অভিযানের পরে আমরা মনে করেছিলাম মাচ অনেক বাড়বে কিন্তু মাছ এখন অনেক কম,দাম বেশি। এজন্য বরিশাল, ঢাকা ও খুলনা মাছ অনেক কম কিনে। আর ভোলার বাজারে কিনার মানুষও কম।
ভোলার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম জানিয়েছে, সব জেলায় সাধারণত ইলিশ একসময় ডিম ছাড়ে না। এলাকা ভেদে তারতম্য হয়ে থাকে। তবে সারা দেশের জেলে প্রতিনিধি এবং কেন্দ্রীয় দপ্তর এর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সুপারিশের ভিত্তিতে নিষেধাজ্ঞার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আগামী পূর্ণিমার জোয়ার আসলে জেলেরা বেশি পরিমাণে ইলিশ পাবেন।
ভোলায় বিগত ২০২০-২১ অর্থ বছরে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৩ শত মেট্রিকটন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে ১ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে মৎস্য বিভাগ।